শান্ত বণিক, বিশেষ প্রতিনিধি: হাজার হাজার বছরের লালিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে এ দেশে একত্রে বসবাস করছে।
সোমবার মনোহরদী উপজেলা হলরুমে আয়োজিত শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে নরসিংদী-৪ মনোহরদী-বেলাবরের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই এ দেশের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ এক সাথে দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাঁর স্বপ্ন ছিল এ দেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন করা। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে বলে সংসদ সদস্য আশা প্রকাশ করেন। আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে মনোহরদীতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর মনোহরদী উপজেলায় মোট ৪৪টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষে সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সভায় মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শহিদ উল্লাহ, মনোহরদী পৌরসভার মেয়র মো. আমিনুর রশিদ সুজন, মনোহরদী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রীয়াশিষ রায়, পুলিশ কর্মকর্তা, আনসার কর্মকর্তা, বিভিন্ন পূজা মন্ডপের সভাপতি-সম্পাদক, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, দুর্গাপূজা ঐতিহাসিকভাবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। বিভিন্ন রাষ্ট্রের বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহে শারদীয় দুর্গোৎসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবের আমেজে পাঁচ দিনব্যাপি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে এক সুন্দর সম্প্রীতির পরিবেশের সৃষ্টি করে। সকলের কাছে আজ ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুধু মনোহরদী উপজেলা কিংবা বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
দুর্গাপূজার প্রধান আবেদন হলো ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ অর্থাৎ সকল অশুভ শক্তির নির্মূল করার জন্যই পৃথিবীতে প্রতিবছর দুইবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটে। প্রাচীনকাল থেকেই বছরের চৈত্র মাসে বসন্তকালে বাসন্তী নামে পৃথিবীতে দুর্গা আবির্ভূত হন যা হিন্দু সম্প্রদায়ে বাসন্তী পূজা হিসেবে পরিচিত। শারদীয় উৎসবের উদ্দেশ্য একই, তবে বাসন্তী পূজার তুলনায় শারদীয় সার্বজনীনতা ও উৎসবের ব্যাপকতা অনেক বেশি। শরতের শিশিরভেজা শিউলি-শেফালী ফুলের গন্ধ, কাশফুলের শুভ্রতা, আকাশজুড়ে শরতের সাদা মেঘ সকলেই যেন দুর্গার আগমন বার্তা নিয়ে আসে ভক্তদের মধ্যে। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় দেবীকে বরণ করে নেয়ার আয়োজন।তিনি আরো বলেন সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় মনোহরদী উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ভাবে সার্বজনীন দুর্গোৎসব উদযাপন করা হবে।
সভায় আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে মনোহরদী উপজেলায় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রতি পূজা মন্ডপে সাদা পোশাকধারী পুলিশসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পূজা মন্ডপের সার্বিক শৃঙ্খলার ক্যাটাগরিতে ১ম, ২য়, ৩য় করে পুরস্কার ও ক্রেস্ট প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভায় পূজা মন্ডপে সাউন্ড বক্স ও ধর্মীয় গান ব্যতিত অন্য কোন গান না বাজানোরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই